plastic

জিএসপি স্থগিত, তবু দমেনি প্লাস্টিক খাত
নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: ০০:০৫, জুলাই ১৬, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
জিএসপি স্থগিত, তবু দমেনি প্লাস্টিক খাতযুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা বা জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্তে সে দেশে রপ্তানি কমার পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন প্লাস্টিকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তবে আশার কথা, গত বছরের সেপ্টেম্বরে জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ার পরও দেশের প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেড় শতাংশের কাছাকাছি।

সদ্য বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান সেই তথ্যই জানাচ্ছে। গত অর্থবছরে আট কোটি ৫৭ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৮৫ কোটি টাকা। এই আয় তার আগের অর্থবছরের আট কোটি ৪৫ লাখ ডলারের চেয়ে দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, ২০১১-১২ অর্থবছরের আট কোটি ৬৯ ডলারের চেয়ে দশমিক ৭১ শতাংশ কম
অবশ্য প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি বাড়ার কারণেই খাতের রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আর জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাস্টিকশিল্প। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশই ইইউতে আমেরিকায় হয় ১০ শতাংশ। তবে আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য ছিল এক সম্ভাবনাময় বাজার। সে জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতিও নিতে থাকে। তবে এখন সেটিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ, জিএসপি স্থগিতের কারণে থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হচ্ছে
এদিকে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (এসক্যাপ) কয়েক বছর আগে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশের প্লাস্টিকশিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। ২০১৫ সালের মধ্যে খাতের রপ্তানি আয় হবে ২০০ কোটি ডলার এবং ২০২০ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪০০ কোটি ডলারে
অবশ্য এখন পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের সরঞ্জাম মোড়কের মাধ্যমে খাতের বার্ষিক প্রচ্ছন্ন রপ্তানি দুই কোটি ডলার সরাসরি রপ্তানি সাড়ে আট কোটি ডলার। ফলে এসক্যাপের ওই হিসাবের যোজন যোজন দূরেই আছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাত
বিষয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের প্লাস্টিক খাত উদীয়মান। বিশ্ববাজারে প্রচুর চাহিদা আছে। ফলে পোশাকশিল্পের মতো উৎসে কর দশমিক ৬০ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা, কর অবকাশ সুবিধা ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুবিধা দিলে খাতের রপ্তানি কয়েক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা যাবে।একই সঙ্গে জিএসপি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। 
রপ্তানি বাড়াতে প্লাস্টিক খাতের জন্য কমপ্লায়েন্স কারখানা প্রতিষ্ঠা এবং বড় আকারের কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত হবে বলে মন্তব্য করেন বিপিজিএমইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্যে পরিবহনে জায়গা বেশি লাগায় জাহাজভাড়া বেশি গুনতে হয়। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যায়। সে জন্য সরকারের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও নগদ সহায়তা দেওয়া।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েত আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএসপি স্থগিতের পরও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হওয়া দেশের বেসরকারি খাতের কর্মচেষ্টার ফল। সরকারের দিক থেকে আমরা চেষ্টা করছিকীভাবে জিএসপি পুনরুদ্ধার হতে পারে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণে অনেক দূর এগিয়েছি আমরা আশাবাদী, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জিএসপির পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ জিএসপি পাবে। এতে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হবে।
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়সে ব্যাপারে আলোচনা করতে খাতের উৎপাদক রপ্তানিকারকদের আহ্বান জানান বাণিজ্যসচিব
এদিকে রপ্তানি বাজারে উত্থান-পতন থাকলেও দেশের বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। একসময় আমদানিনির্ভর প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রীর প্রায় সবই এখন দেশে তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পরিমাণ প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। চাহিদার পুরোটাই এখন মেটাচ্ছে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট-মাঝারি বড় প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আর খাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ
দেশে বর্তমানে পোশাক খাতের সরঞ্জাম, খেলনাসামগ্রী, ঘরে ব্যবহারের বিভিন্ন তৈজসপত্র, অফিসে ব্যবহারের জিনিসপত্র, গৃহনির্মাণসামগ্রী জানালা দরজা, চিকিৎসার উপকরণ, কৃষি খাতের জন্য প্লাস্টিকের পাইপ বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি সাইকেলের যন্ত্রাংশ, পোলট্রি মৎস্য খাতের বিভিন্ন পণ্য, কম্পিউটারের উপকরণসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। ফলে আমদানি নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিছু খেলনাসামগ্রী চীন থেকে এখনো আসে
বিপিজিএমইএ জানায়, বর্তমানে ২০টি বড় প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্সপোল্যান্ড, স্পেন, কানাডাসহ বিশ্বের ২৩টি দেশে সরাসরি যাচ্ছে বাংলাদেশের এই পণ্য। সার্কভুক্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি
বিপিজিএমইএর সাধারণ সম্পাদক কে এম ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে আলাদা একটি শিল্পপল্লি করা দরকার। কারণ, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলোকে এক জায়গায় আনা দরকার। এমনটি হলে বিদেশি ক্রেতারা সহজেই বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রী যাচাই-বাছাই এবং তুলনা করতে পারবেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয়াদেশ বাড়বে।
৭০ রপ্তানিই হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে
.% প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরে
 হাজার কোটি টাকার চাহিদা আছে অভ্যন্তরীণ বাজারে
 হাজার ছোট-মাঝারি বড় প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করে
 লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে পর্যন্ত 
৬৮৫ কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে গত ২০১৩১৪ অর্থবছরে